২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে খুলনায় এক মৌন মিছিল ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৪টায় নগরীর শিববাড়ির জিয়া হল চত্বরে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে দেশব্যাপী প্রতিটি বিভাগে বিএনপি এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সমাবেশে একাত্তর ও চব্বিশের পরাজিত শক্তির সঙ্গে কোনো আপস নেই উল্লেখ করে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি নেতারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ২৪ দিয়ে ৭১-কে মুছে ফেলতে চাইছে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের জন্ম শত্রুরা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করেছে। ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা চব্বিশের আন্দোলনকে ব্যবহার করে একাত্তরের গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়। একাত্তর আমাদের জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। একাত্তর কখনো মুছে ফেলা যাবে না। চব্বিশের আন্দোলন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরিপূরক। একাত্তরের পরাজিত শক্তি যদি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান দিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার চেষ্টা করে, তাহলে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট হওয়া ঐক্যে ফাটল ধরবে। একাত্তর এবং চব্বিশ উভয়কে ধারণ করলেই কেবল জাতীয় ঐক্য অর্থবহ হবে।
বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্টবিরোধী সফল আন্দোলনের ফলে জুলাই অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এ আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। দেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। এই সফল আন্দোলনের মূল নায়ক তারেক রহমান। বিএনপি জনগণের দল। মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম করে আসছে। সেবা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চায়। বিএনপি ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। দেশের দুঃসময়ে খালেদা জিয়া দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন। বিএনপি খেটে খাওয়া মেহনতি অসহায় মানুষের জন্য রাজনীতি করে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানের মাস্টারমাইন্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই এ দেশের ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের লোক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না।
একটি চক্র বিএনপির অর্জন নষ্ট করার জন্য ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিবাদের দোসরদের উৎখাত করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? এনসিবি যারা করেন, যাদের বয়স এখনো ৩০ এর কোটা পার হয় নাই, তারা শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশের সবচে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই বিএনপির যদি আপনাদের শেল্টার না দেয়, বাংলাদেশের কোন জেলায় ফ্যাসিবাদের দোসরদের কারণে আপনারা কিন্তু ঢুকতে পারবেন না। গোপালগঞ্জে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করেছি।
বক্তারা বলেন, একটি ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দল। যাদের জন্ম পাকিস্তানে, ৭১ সালে যারা আমার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত নিয়েছিল, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে যারা মুনাফিকি করেছিল, তারা আবার নতুন করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়; মিথ্যা অপপ্রচার করে, ভিন্ন ভাষায় আমাদের দল সম্পর্কে কথা বলে আপনারা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। ধর্ম ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে জনগণের কাতারে আসুন। যুগে যুগে যারা বেঈমানি করেছেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, মন্দির পুড়িয়েছে, হিন্দুদের সম্পদ লুট করেছে, আবার তারা বাংলাদেশের মাটিতে নতুন করে খেলা শুরু করেছে। এই খেলা সফল হবে না; ইনশাআল্লাহ। নির্বাচন হবে এবং জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। বিএনপির নেতৃত্বে শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও তাবেদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, দিল্লী নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোন দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।
বক্তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে দল লড়াই করছে, সে দল হলো বিএনপি। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের সংকটকালে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতির প্রতিটি সঙ্কটে বারবার আবির্ভূত হয়েছে জিয়া পরিবার। জাতিকে রক্ষা করেছে, জাতিকে দিকনির্দেশনা, পথনির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের সামনে নির্বাচন ছাড়া বিকল্প কোনো কিছু নাই। আমাদের সামনে নির্বাচন, নির্বাচন এবং নির্বাচন। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, আলী আসগর লবি, রেহানা ঈসা, এড. মোমরেজুল ইসলাম, শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, শ্রমিকদলের মজিবর রহমান, যুবদলের আব্দুল আজিজ সুমন, মহিলা দলের নার্গিস আলী, কৃষকদলের আক্তারুজ্জামান সজিব তালুকদারসহ অনেকে। সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করের ওলামা দল নেতা কাজী আব্দুস সালাম। সমাবেশ শেষে মৌন মিছিল শুরু হয়ে কেডিএ এভিন্যিউ হয়ে রয়েল চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন এবং মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মিছিলস্থলে যোগ দেন। সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত মৌন মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি শিববাড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর ময়লাপোতা হয়ে রয়েল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
খুলনা গেজেট/এএজে/এমএম